দারিদ্র্য ও সংকটের বিরুদ্ধে জয়ী এক শিশু রানার মারওয়া হাসান
September 14, 2024DHAKA International 10K
Where Every Step Tells a Story!
দারিদ্র্য ও সংকটের বিরুদ্ধে জয়ী এক শিশু রানার মারওয়া হাসান
মিশরের আসওয়ানের কহর এল-মাহমুদিয়া গ্রামের ছোট্ট এক মেয়ে, মারওয়া হাসান, যার জীবনের কঠিন বাস্তবতা তাকে পিছনে টেনে ধরেছিল, কিন্তু একদিন তার জীবনে একটি অপ্রত্যাশিত মোড় নেয়।
মারওয়া, যে তার সৎমায়ের অবহেলায় স্কুলে যেতে পারত না এবং রাস্তায় টিস্যু বিক্রি করে তার পরিবারকে সাহায্য করত, তার জীবন ছিল সীমাহীন সংগ্রামের মধ্যে। তার অক্ষরজ্ঞান ছিল না, মোবাইল ফোন ছিল না এবং অন্যান্য শিশুদের মতো আকর্ষনীয় পোশাকও ছিল না। কিন্তু, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির ২ তারিখে তার জীবন একটি নতুন দিশা খুঁজে পায়।
মারওয়া প্রতি সকালের মতো কাজে বের হয়ে রাস্তায় হাজার হাজার মানুষের ভিড় দেখতে পায়। উৎসুক হয়ে সে জানতে চায়, কেন এত মানুষ জমায়েত হয়েছে। জানতে পারে, আসওয়ান হার্ট সেন্টারের উদ্যোগে একটি দাতব্য ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ম্যারাথনটিতে বড়দের জন্য ছিল ম্যারাথন, হাফ ম্যারাথন এবং ১০ কিলোমিটার ক্যাটাগরির দৌড়, আর শিশুদের জন্য ছিল ১ কিলোমিটার দৌড়।
মারওয়া উত্তেজিত হয়ে আয়োজকদের কাছে জানতে চায়, সে শিশুদের দৌড়ে অংশ নিতে পারবে কিনা। আয়োজকরা প্রথমে তার পোশাক দেখে আপত্তি জানান-তার পরণে ছিল একটি সাধারণ জামা এবং পায়ে ছিল পুরনো স্যান্ডেল। তবে মারওয়ার অনুরোধ এবং তার দৃঢ়তার কারণে আয়োজকরা তাকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেন, এমনকি তাকে প্রবেশ ফি ছাড়াই দৌড়াতে সুযোগ করে দেন।
মারওয়ার কাহিনী একটি অনুপ্রেরণা, যা আমাদের সকলকে শেখায় যে, সত্যিকারের সাহস ও অধ্যবসায়ের সাথে যে কেউ জীবনের প্রতিকূলতা জয় করতে পারে। তার এই অবিস্মরণীয় অর্জন শুধু একটি জয় নয়, এটি দারিদ্র্য, সংকট, এবং সীমাবদ্ধতার বিরুদ্ধে এক অটুট লড়াইয়ের প্রতীক।দৌড় শুরু হলে, মারওয়া তার স্যান্ডেল খুলে দিয়ে পায়ে খালি অবস্থায় দৌড়াতে শুরু করে। তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স সবাইকে চমকে দেয়। অপ্রশিক্ষিত হলেও, মারওয়া তার সততা এবং কঠোর পরিশ্রম দিয়ে অন্যান্য প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে এগিয়ে যায়। তিনি ফিনিশ লাইনে পৌঁছে প্রথম স্থান অর্জন করেন এবং গোল্ড মেডেল পায়। এর সঙ্গে তার অর্জন হিসেবে তাকে এক বোতল রান্নার তেল এবং নীল নদে বিনামূল্যে ভ্রমণের ক্রুজের টিকেট দেওয়া হয়।
মারওয়ার এই অসাধারণ অর্জন কেবল মিশরে নয়, আন্তর্জাতিকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত জন ক্যাসন এবং মিশরীয় অলিম্পিক কমিটি তার প্রশংসা করেন। তাকে মিশরীয় অ্যাথলেটিক ফেডারেশনে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং তালাআ’য়া এল গেইশ স্পোর্টস ক্লাবে যোগদান করার সুযোগ দেওয়া হয়।
তবে, মারওয়ার জীবনের পথ সহজ ছিল না। তার বাবা নিম্মআয়ের কাজ করত, ফলে মারওয়াকে আবারও রাস্তায় টিস্যু বিক্রি করতে ফিরে যেতে হয়। এছাড়া কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে তার অ্যাথলেটিক প্রশিক্ষণ বন্ধ হয়ে যায় এবং ২০২১ সালে তাদের বাড়ি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
এসব বিপর্যয়ের মধ্যে থেকেও, মারওয়া তার পড়াশুনা চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তার পরিবারে একমাত্র সে স্কুলে যেতে পেরেছে। ২০২২ সালের শুরুতে, সে তার প্রথম পেশাদার দৌড়ের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে, যা তালাআ’য়া এল গেইশ স্পোর্টস ক্লাব স্পন্সর করে এবং এখানেও সে প্রথম স্থান অর্জন করে।
মারওয়া হাসানের কাহিনী শুধুমাত্র একটি জয়ের গল্প নয়; এটি একটি সাহসিকতার, অধ্যবসায়ের এবং একজন মানুষের সংগ্রামের গল্প। তার জীবন প্রমাণ করে যে, দৃঢ়তা, পরিশ্রম এবং একনিষ্ঠতার মাধ্যমে যে কেউ নিজের ভাগ্য বদলে ফেলতে পারে, কখনও কখনও বাস্তবতা যতই কঠিন হোক না কেন।
- সম্পাদনা: কসমিক কালচার
- তথ্যসূত্র: Egypttoday, Egypt Joy Travel, Wikipedia
- ছবি কৃতজ্ঞতা: egyptjoy.com
Leave A Comment
DHAKA International 10K
Where Every Step Tells a Story!