DHAKA International 10K

Where Every Step Tells a Story!

পোলিও আক্রান্ত পা নিয়েও হার মানেনি যে রানার উইলমা রুডল্ফ

পোলিও আক্রান্ত পা নিয়েও হার মানেনি যে রানার উইলমা রুডল্ফ

উইলমা রুডল্ফের

ছোটবেলায় যাকে নিশ্চিতভাবেই বলা হয়েছিল সে আর কখনোই হাঁটতে পারবে না। কিন্তু তার নিরলস স্বপ্ন তাকে আন্তর্জাতিক ট্র্যাকে তারকায় পরিণত করেছিল এবং সমসাময়িক সময়ে ‘বিশ্বের দ্রুততম মহিলা’ হিসেবে ভূষিত করেছিল। উইলমা রুডল্ফ এর জীবনাখ্যান তাই একটি অনুপ্রেরণার গল্প, যেখানে হতাশা আর ব্যর্থতা তাকে নিচে নামিয়ে দিতে পারে নি, বরং উন্নতির সোপানে এগিয়ে নিয়ে গেছে অবিশ্বাস্যভাবেই।

রুডল্ফের অপরিণত অবস্থায় জন্ম হয়েছিল ১৯৪০ সালের ২৩ জুন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসির সেন্ট বেথলেহমে। জন্মের সময় তার ওজন ছিল মাত্র ৪.৫ পাউন্ড। ডাক্তাররা তার বাঁচার আশা অনেকটাই ছেড়ে দিয়েছিলেন, যদিও অপরিণত অবস্থা নিয়েই শেষমেস জীবনযুদ্ধে টিকে যান। রুডল্ফের বাবার দুই বিয়ে ছিল এবং রুডল্ফ ছিল বাইশজন ভাইবোনের মধ্যে বিশতম। তার বাবা ছিলেন রেলওয়ের একজন মুটে এবং মা গৃহপরিচারিকা। অন্যান্য দরিদ্র মানুষের মতোই রুডল্ফের পারিবারিক অবস্থা অনেকটা শোচনীয় ছিল। রুডল্ফের জন্মের পরে তারা সেন্ট বেথলেহম থেকে ক্লার্কসভিলে চলে আসেন।

ছোট বয়সেই তার দুইবার নিউমোনিয়া, স্কারলেট জ্বর হয়েছিল এবং মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই পোলিওতে আক্রান্ত হন। কিছুটা সেরে উঠলেও তার তার বাম পা অনেকটা অকেজো হয়ে যায় এবং শৈশবের বেশিরভাগ সময়টাই তাকে প্রতিবন্ধী হিসেবে কাটাতে হয়। ডাক্তার স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়েছিল রুডল্ফের পক্ষে কখনোই হাঁটা সম্ভব হবে না। দীর্ঘ বছর তাকে ধাতব জুতো পরে কাটাতে হয়েছে। বছরের পর বছরে তার মা, ভাই-বোনেরা দিনে চারবার করে তার পায়ে ম্যাসেজ করে দিত। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে বেঁচে থাকতে হবে এটা ছোট্ট রুডল্ফের মনে ভীষণভাবে আঘাত করেছিল। কিন্তু তার মা সবসময় তাকে উৎসাহ দিত অধ্যবসায় ও বিশ্বাস থাকলে একদিন সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। রুডল্ফ তার মায়ের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন।

ক্লার্কসভিলে সেসময় আফ্রিকান-আমেরিকান নাগরিকদের জন্য চিকিৎসা সেবা খুবই অপ্রতুল ছিল, তাই রুডল্ফের বাবা-মা ৫০ মাইল দূরে ন্যাশভিলের বিখ্যাত মেহ্যারি মেডিকেল কলেজে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এজন্য দুই বছর ধরে নিয়মিতভাবে প্রতি সপ্তাহে রুডল্ফ আর তার মা বাসে করে ন্যাশভিলের হাসপাতালে যেতেন। ডাক্তাররা তাকে বারো বছর বয়স পর্যন্ত লোহার জুতো পরতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।

এই অবস্থায় আট বছর বয়স পর্যন্ত স্কুল শুরু করতে পারেনি রুডল্ফ। বাড়িতে বসেই পড়াশুনা করতে হত তাকে। স্কুলে না যাওয়ার কারণে ছোটবেলায় কিন্ডারগার্টেন এবং প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সুযোগ পাননি রাডল্ফ। তিনি ১৯৪৭ সালে সাত বছর বয়সে ক্লার্কসভিলে কোব এলিমেন্টারি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া শুরু করেছিলেন। নয় বছর বয়সে ডাক্তারের উপদেশ অগ্রাহ্য করে পায়ের লোহার জুতা খুলে ফেলেন রাডল্ফ।

রুডল্ফ ক্লার্কসভিলের অল-ব্ল্যাক বার্ট হাই স্কুলে পড়াশোনা করার সময়েই প্রথমবারের মতো স্পোর্টসের সাথে পরিচিত হন। গ্রেড এইটে থাকা অবস্থায় রুডল্ফ তার বোন ইউভোনির সাথে বাস্কেটবল এবং ট্র্যাকে অংশ নেন। তার গতির ক্ষিপ্রতার জন্য স্কুলের কোচ সি. সি. গ্রে তাকে ‘স্কিটার’(এক ধরনের মশা) নাম দেন।

অলিম্পিকের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোন একক অলিম্পিকে একজন নারী হিসেবে তিনটি ক্যাটাগরিতে স্বর্ণ পদক জেতার দুর্লভ সম্মাননা অর্জন করেন উইলমা রুডল্ফ
কয়েক বছর পরে, রুডল্ফ টাস্কেগি ইনস্টিটিউটে একটি ট্র্যাকে অংশ নিয়েছিলেন, যদিও প্রতিটি রেসেই তিনি হেরে যান। কিন্তু টেনেসি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্র্যাক কোচ এড টেম্পল তাকে দেখে ঠিকই আন্দাজ করতে পারলেন যে রুডল্ফের মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে এবং তাই টেনেসি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রীষ্মকালীন ট্র্যাক ক্যাম্পে তাকে যুক্ত করেন। রুডল্ফ তার কোচকে জানান, দৌড়ে সে পৃথিবীর দ্রুততম মেয়ে হতে চায়। কোচ এড টেম্পল তার এই অভিপ্রায় শুনে বলেছিলেন, ‘তোমার ইচ্ছাশক্তিই তোমাকে জিতিয়ে দেবে। আমি আছি তোমার সাথে তোমাকে সাহায্য করতে।’ এর ঠিক এক বছর পরেই ১৬ বছর বয়সে রুডল্ফ ১৯৫৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকে ২০০ মিটার দৌড়ে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিলেন। রুডল্ফ এই অলিম্পিকে আমেরিকান দলের সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন।

স্বপ্নের ক্ষমতা এবং মানবিক চেতনার প্রভাবকে কখনোই খাটো চোখে দেখবেন না। এই ধারণায় আমরা সকলেই এক: আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই জীবনের মহৎ সম্ভাবনা রয়েছে।

এরপরে রুডল্ফ রীতিমতো ক্লার্কসভিলের তারকা বনে যান। তবে রুডল্ফ তার ব্রোঞ্জ পদকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাননি। টেনেসি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্র্যাক দলের সদস্য হিসেবে তিনি নিজেকে পুরোপুরি রানিং-এ সমর্পন করেন এবং ১৯৬০ সালের অলিম্পিকের জন্য দল গঠন করেন। নিজেকে দক্ষ হিসেবে উপস্থাপনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান। ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরের অলিম্পিকে রুডল্ফ ১০০ মিটার রেস, ২০০ মিটার রেস এবং ৪০০ মিটার নারী রিলে রেসে বিজয়ী হন। অলিম্পিকের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোন একক অলিম্পিকে একজন নারী হিসেবে তিনটি ক্যাটাগরিতে স্বর্ণ পদক জেতার দুর্লভ সম্মাননা অর্জন করেন।
ক্লার্কসভিলে শহরে উইলমা রুডল্ফ এর ভাস্কর্য
উইলমা রুডল্ফের জীবনের অর্জন আমাদের শিক্ষা দেয়, জীবনের বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে এবং মনোবল দৃঢ় থাকলে নিজের ইচ্ছেকে সফল করা মোটেও অসম্ভব নয়। ১৯৬০ সালের অলিম্পিকে একজন পক্ষাঘাতগ্রস্থ মেয়ে পৃথিবীর দ্রুততম মহিলা হিসেব স্বীকৃতি লাভের মধ্যে দিয়ে জীবনের নানাবিধ প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানোর এক অপ্রতিরোধ্য পথচলার গল্প রানারদের অনুপ্রাণিত করবে সবসময়।

 

সম্পাদনা: কসমিক কালচার
তথ্যসূত্র: National Women’s History Museum, Wikipedia
ছবি কৃতজ্ঞতা: Library of Congress, behance.net

    Published on: Sunday, 10 May 2020, 05:32 pm | Last update: Saturday, 14 September 2024, 09:22 pm | Total views: 1448.

    DHAKA International 10K

    Where Every Step Tells a Story!