দারিদ্র্য ও সংকটের বিরুদ্ধে জয়ী এক শিশু রানার মারওয়া হাসান
September 14, 2024DHAKA International 10K
Where Every Step Tells a Story!
চার মিনিটে মাইল অতিক্রমকারী বিশ্বের প্রথম রানার রজার ব্যানিস্টার
পুরো নাম রজার গিলবার্ট ব্যানিস্টার। রজারের জন্ম লন্ডনের উপকণ্ঠে হ্যারোতে ১৯২৯ সালের ২৩ মার্চ। তার বাবা রাল্ফ এবং মা অ্যালিস উভয়েই ল্যাঙ্কাশায়ারের শ্রমজীবী পরিবার থেকে এসেছিলেন। রাল্ফ সিভিল সার্ভিসে কাজ করার জন্য ১৫ বছর বয়সে লন্ডনে চলে আসেন এবং ১৯২৫ সালে অ্যালিসকে বিয়ে করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে তারা সপরিবারে বাথে চলে আসেন এবং রজার সিটি অফ বাথ বয়েস স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। এখানে পড়াশুনা করার সময়ই তিনি ক্রস কান্ট্রি রানিং এর মাধ্যমে নিজের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পান এবং টানা তিনবার জুনিয়র ক্রস-কান্ট্রি কাপ জিতেছেন। ফলস্বরূপ তাকে একটি ছোট্ট ট্রফি রেপ্লিকা দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাদের বাসস্থানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং এসময় তারা মাটির নিচে কক্ষে বাস করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ রজারের শৈশবকে গভীরভাবে আঘাত করেছিল। ১৯৪৪ তারা সকলে পুনরায় লন্ডনে ফিরে আসেন এবং রজার কেমব্রিজের সেন্ট জন’স কলেজে পড়বার সুযোগ পান। ছোটবেলায় রজারের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার, কিন্তু তার পরিবারের পক্ষে পড়াশুনো চালিয়ে নেওয়ার কতোটা আর্থিক সঙ্গতি থাকবে এই চিন্তা তাকে ভাবাত।
রজার ব্যানিস্টার ১৯৪৬ সালের শরতে ১৭ বছর বয়সে অক্সফোর্ডে তার রানিং ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। তিনি এর আগে কখনও রানিং স্পাইক পরেননি অথবা কখনো ট্র্যাকে দৌড়াননি না। তিনি খুবই হালকা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। একজন পেশাদার দৌড়বিদ হিসেবে তিনি নিজেকে ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে লাগলেন। তিনি ১৯৪৭-এ ৪:২৪.৬ মিনিটে এক মাইল অতিক্রম করতে সক্ষম হন। তবে ১৯৪৮ সালে তাকে অলিম্পিকে সম্ভাব্য প্রতিযোগী হিসাবে নির্বাচিত করা হয়, কিন্তু তিনি এটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, কারণ তিনি মনে করেছিলেন এই স্তরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো এখনও প্রস্তুত হননি। তবে ১৯৪৮ সালের অলিম্পিকে দৌড়ের ইভেন্ট তাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে এবং ১৯৫২-তে হেলসিঙ্কিতে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকে অংশ নিতে তার প্রশিক্ষণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি ৮০০ মিটার রেস ১:৫২.৭ মিনিটে সম্পন্ন করেন এবং বেশ কিছু মাইল রেস ৪:১১ মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন করেন।
ধীরে ধীরে তিনি নিজেকে আরও প্রস্তুত করে তুলতে লাগলেন। এজন্য ১৯৫১ মৌসুমের পর থেকে ১৯৫২ এর বসন্তের শেষ পর্যন্ত রেসে অংশ নেওয়া থেকে বিরতি নিয়ে অলিম্পিকের জন্য শক্তি সঞ্চয় করতে থাকেন এবং নিজের নৈপুণ্যে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই অলিম্পিকে তিনি প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলেন। কারণ একদম শেষ মুহূর্তে ইভেন্টের শিডিউল পরিবর্তিত হওয়ায় তিনি পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাবে চতুর্থ স্থান লাভ করেন। স্বাভাবিক তার সমর্থকদের আশা ভঙ্গ হলো। ব্রিটিশ স্পোর্টস মিডিয়াও তার প্রশিক্ষণ পদ্ধতি প্রশ্নবিদ্ধ করে তিরষ্কার করতে ছাড়েনি। এই ঘটনায় রজার ভীষণভাবে মুষড়ে পড়েন, এমনকি রানিং ত্যাগ করার কথাও চিন্তা করেছিলেন।
শেষ পর্যন্ত রজার মত বদলালেন। ভাবলেন, এবার নতুন কোন চ্যালেঞ্জ বেছে নেওয়া যাক। নিজেকে পুনরায় গুছিয়ে নিয়ে রজার আপাতদৃষ্টিতে দুর্গম চার মিনিটে মাইল অতিক্রমের রেকর্ডটি গড়তে সংকল্প করেছিলেন। এই সময়ে তিনি সেন্ট মেরি হসপিটাল মেডিকেল স্কুলে চিকিত্সাশাস্ত্রের ছাত্র ছিলেন এবং প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিদিন মাত্র ৪৫ মিনিট সময় বরাদ্দ করতে পেরেছিলেন। তবে তিনি বছরের পর বছর মাইলের সময় উন্নতি করতে দেখে এবারে দৃঢ় বিশ্বাস করেছিলেন যে তিনি অবশ্যই পারবেন। যদিও তার এই অভিপ্রায় অনেকের কাছেই গুরুত্বহীন মনে হয়েছে।
অতঃপর রজারের বহু প্রতিক্ষীত সময় এলো। ১৯৫৪ সালের ৬ মে তিনি অক্সফোর্ডে ব্রিটিশ অ্যামেচার অ্যাথলেটিক এসোসিয়েশনের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পেলেন। তিনি তার বন্ধু ক্রিস চ্যাটওয়ে এবং ক্রিস ব্র্যাশারকে প্রথম ল্যাপে পেস করার জন্য সাথে রাখলেন, যাতে তিনি তিন-চতুর্থাংশ মাইল তিন মিনিটেরও কম সময়ে শেষ করতে পারেন। দিনটি ছিল ঠান্ডা, স্যাঁতস্যাতে এবং বাতাসের বেগও ছিল বেশ। তবে শেষ মুহুর্তে বাতাস কমে যায় এবং রজার তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সুযোগটি লুফে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
দৌড়ে মোট সাতজন প্রতিযোগী ছিল। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যালান গর্ডন, জর্জ ডুলে ও নাইজেল মিলার এবং ব্রিটিশ অ্যামেচার অ্যাথলেটিক এসোসিয়েশন থেকে রজার, তার দুই বন্ধু ক্রিস চ্যাটওয়ে ও ক্রিস ব্র্যাশার এবং টম হল্যাট। তবে শেষ মুহূর্তে বাদ পড়লেন নাইজেল মিলার। মিলার আসলে তাঁর দৌড়ানোর কথা জানতেনই না। তিনি দর্শক হিসেবে এসে দেখেন প্রতিযোগীদের তালিকায় তার নামও রয়েছে। তবে শেষ মুহুর্তে একজোড়া বুট জোগাড় করতে না পারায় আর অংশ নিতে পারলেন না।
নির্ধারিত সময়ে ছয়জনকে নিয়েই শুরু হলো দৌড়। শুরু থেকেই কিছুটা পিছিয়ে ছিলেন রজার ব্যানিস্টার (রানিং নম্বর ৪১)। ব্র্যাশার (রানিং নম্বর ৪৪) প্রথম ল্যাপটি ৫৮ সেকেন্ডে এবং অর্ধ-মাইল ১.৫৮ মিনিটে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন এবং দ্বিতীয় ল্যাপের চ্যাটওয়ে (রানিং নম্বর ৪২) সামনে এগিয়ে নেতৃত্ব নেন এবং রজার তার চূড়ান্ত গতিতে পৌঁছানো পর্যন্ত সঙ্গ দেন। রজার ঝড় তুললেন ঠিক শেষ ২৭৫ গজে এসে। মাত্র ৫৯ সেকেন্ডে শেষ ল্যাপটা পেরোলেন। ছুঁয়ে ফেললেন ফিনিশিং লাইন। বস্তুত শুধু ফিনিশিং লাইনই নয়, বরং পঁচিশ বছরের রজার ছুয়েছিলেন সুদীর্ঘকালের এক অসম্ভবকে।
দর্শকরা অধীর আগ্রহে সময় জানার অপেক্ষায় ছিলেন। ঘোষক নরিস ম্যাকহুইর্টার সবার উৎকণ্ঠাকে আরও দীর্ঘায়িত করে যখন নানা বিশ্লেষণাত্মক প্রসঙ্গ শেষ করে লাউড স্পিকারে ঘোষণা করলেন: দ্য টাইম ওয়াজ থ্রি…। তারপরের কথাটুকু চাপা পড়ে গেল সহস্রাধিক জনতার বিজয়োল্লাসে। রচিত হলো রানিং দুনিয়ার নতুন ইতিহাস। রজারের সময় লেগেছিল ৩:৫৯.৪ মিনিট। আশ্চর্য হলেও, এতোদিন কেউ না পারলেও রজারের এই অর্জনের টিক ৪৬ দিন পরই আরেক দৌড়বিদ ভাঙ্গলেন রাজারের রেকর্ডও। এরপর থেকে আরও অনেক দৌড়বিদ চার মিনিটের কম সময় নিয়ে এক মাইল দৌঁড়েছেন।
চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়ালেখা শেষ করে পেশাগত জীবনে রজার একজন নিউরোলজিস্ট হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৭৫ সাথে তাকে ‘নাইট’ উপাধি দেওয়া হয়। রজার ব্যানিস্টার ৮৮ বছর বয়সে ২০১৮ সালের ৩ মার্চ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
- সম্পাদনা: কসমিক কালচার
DHAKA International 10K
Where Every Step Tells a Story!